২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর তরুণদের রাজনীতিতে যাঁদের নাম ঘুরে ফিরে এসেছে, তাঁদের একজন শরিফ ওসমান হাদি। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৩১ বছর।
গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে হাদি পরিচিতি পান ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে। একই সঙ্গে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর আকস্মিক মৃত্যু তরুণ রাজনীতিতে এক ধরনের শূন্যতা তৈরি করেছে বলে মনে করছেন তাঁর সহকর্মীরা।
শরিফ ওসমান হাদির জন্ম ১৯৯৩ সালে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায়। তাঁর বাবা মরহুম মাওলানা আব্দুল হাদি ছিলেন নলছিটি ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার শিক্ষক। ছয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট।
শিক্ষাজীবনের শুরু নলছিটি ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসায়। এরপর নেছারাবাদ কামিল মাদরাসা থেকে আলিম পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি সামাজিক ও রাজনৈতিক তৎপরতায় যুক্ত হন।
রাজধানীর রামপুরা এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন হাদি। তিনি স্ত্রী, এক সন্তান ও মাকে নিয়ে ঢাকায় থাকতেন।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থান এবং পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক নানা দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। রামপুরা এলাকার আন্দোলনের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
জুলাইয়ের আন্দোলনে নিহতদের দাবি আদায়, আধিপত্যবাদবিরোধী অবস্থান এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে তিনি নিয়মিত রাজপথে ছিলেন।
গণঅভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি ‘ইনকিলাব মঞ্চ’ নামে একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হন। সংগঠনটির মাধ্যমে তিনি রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সরব ছিলেন।
রাজনীতিতে প্রচলিত ধারার প্রতি তাঁর ছিল স্পষ্ট আপত্তি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রম নিয়েও তিনি প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন। একই সঙ্গে ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে নতুন ধারা প্রয়োজন—এমন বক্তব্য বিভিন্ন সময় তুলে ধরেন তিনি।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। দিনভর উদ্বেগের মধ্যেই রাতে তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়।
আরডি