এইমাত্র
  • ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-টু’ শুরুর সিদ্ধান্ত
  • হাদি আমার নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, প্রতিযোগী: মির্জা আব্বাস
  • ওসমান হাদির সর্বশেষ অবস্থা জানালেন চিকিৎসক
  • ‘ফকির, মিসকিনদের ছেলে-মেয়েরা বড় রাজনৈতিক দলের নেতা’
  • রাশিয়ার বিরুদ্ধে জার্মানির বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় সাইবার হামলার অভিযোগ
  • জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তায় কমিটি করা হয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • ‘দিল্লির মসনদ’ জ্বালিয়ে দেব: হাসনাত আবদুল্লাহ
  • নির্বাচনে প্রার্থীদের নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার
  • প্রয়োজনে চিকিৎসার জন্য হাদিকে বিদেশে পাঠাবে সরকার
  • মেসিকে দেখতে না পেয়ে স্টেডিয়ামে সমর্থকদের ভাঙচুর
  • আজ শনিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ | ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    জামিন আদেশে স্বাক্ষর, কিন্তু কার্যকরে দীর্ঘ বিলম্ব

    এক সপ্তাহে চার খুনের মামলায় জামিন পেলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ-তামান্না

    গাজী গোফরান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (চট্টগ্রাম) প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:২০ পিএম
    গাজী গোফরান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (চট্টগ্রাম) প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:২০ পিএম

    এক সপ্তাহে চার খুনের মামলায় জামিন পেলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ-তামান্না

    গাজী গোফরান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (চট্টগ্রাম) প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:২০ পিএম

    চট্টগ্রামের অপরাধ জগতের শীর্ষ তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ এবং তাঁর স্ত্রী শারমিন আক্তার তামান্না, এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুই দিনে চারটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পেলেও সেই তথ্য প্রায় আড়াই মাস গোপন রাখা হয়। পুলিশের একটি অংশ, প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট শাখা এবং সংবাদমাধ্যমের চোখ এড়িয়ে জামিন কার্যকর করতে পরিকল্পিতভাবে ধীরগতির কৌশল নেওয়া হয়েছিল, এমন অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে।

    এই দম্পতির বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও অপরাধ সংগঠন পরিচালনার গুরুতর অভিযোগ থাকলেও জামিন প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে যে অস্বাভাবিকতা দেখা গেছে, তা নিয়ে এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাষ্ট্রপক্ষের ভূমিকা এবং বিচারিক তদারকি প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

    পুলিশ ও কারা কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ অন্তত ১০টি হত্যা মামলাসহ মোট ১৯টি মামলার আসামি। এর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের আলোচিত জোড়া খুন, প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা সন্ত্রাসী সরোয়ার বাবলা হত্যাকাণ্ড এবং বিভিন্ন এলাকায় সংঘটিত নৃশংস অপরাধ। দীর্ঘদিন ধরে তিনি চট্টগ্রামের অপরাধ জগতের একটি সক্রিয় ও প্রভাবশালী নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

    অপরদিকে তাঁর স্ত্রী শারমিন আক্তার তামান্নার বিরুদ্ধেও রয়েছে একাধিক হত্যা মামলাসহ অন্তত ৮টি মামলা। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের দাবি, তামান্না শুধু সাজ্জাদের সহযোগী নন, বরং অপরাধ কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখতেন এবং প্রয়োজনে হুমকি-ধামকিতেও সরাসরি জড়িত ছিলেন।

    হাইকোর্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর চান্দগাঁও থানার দোকান কর্মচারী শহিদুল ইসলাম হত্যা মামলায় সাজ্জাদ ও তামান্নাকে জামিন দেন হাইকোর্ট। একই দিনে, একই বেঞ্চ ১৮ আগস্ট পাঁচলাইশ থানায় সংঘটিত ওয়াসিম আকরাম হত্যা মামলায় এই দম্পতিসহ তিনজনকে জামিন দেন।

    এর মাত্র এক সপ্তাহ পর, ২২ সেপ্টেম্বর একই বেঞ্চ ২৮ আগস্ট পাঁচলাইশ থানার দোকান কর্মচারী মো. ফারুক হত্যা মামলায় সাজ্জাদ ও তামান্নাকে জামিন দেন। একই দিনে পাঁচলাইশ থানার আফতাব উদ্দিন তাহসীন হত্যা মামলাতেও তারা জামিন পান।

    চারটি মামলাতেই রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিন দেন বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি ইউসুফ আবদুল্লাহ সুমনের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ।

    যদিও ১৫ ও ২২ সেপ্টেম্বর জামিন আদেশ দেওয়া হয়, তবে হাইকোর্টের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. ইউসুফ আলী ওই আদেশে স্বাক্ষর করেন যথাক্রমে ১৮ সেপ্টেম্বর ও ৫ অক্টোবর। এরপরও জামিননামা চট্টগ্রামের সংশ্লিষ্ট আদালতে পৌঁছাতে লেগে যায় প্রায় আড়াই মাস। শেষ পর্যন্ত ৮ ডিসেম্বর সেই কাগজপত্র চট্টগ্রামে আসে।

    আইনসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর ভাষ্য, সাধারণত হাইকোর্ট থেকে জামিন হলে সর্বোচ্চ এক সপ্তাহের মধ্যেই জামিননামা সংশ্লিষ্ট আদালত ও কারাগারে পৌঁছে যায়। কিন্তু এই মামলাগুলোর ক্ষেত্রে তা হয়নি। বরং পরিকল্পিতভাবে সময় নেওয়া হয়েছে, যাতে পরিস্থিতি কিছুটা ‘ঠান্ডা’ হলে জামিন কার্যকর করা যায়।

    একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জামিন আবেদনে চারটি মামলাতেই কৌশলগতভাবে এক নম্বরে রাখা হয় তামান্নার নাম। সাজ্জাদের নাম ছিল দুই বা তিন নম্বরে। আইনজীবী মহলের একাংশের মতে, উদ্দেশ্য ছিল নারী আসামি হিসেবে আদালতের সহানুভূতি অর্জন এবং একই সঙ্গে সাজ্জাদের ভয়ংকর সন্ত্রাসী পরিচয় আংশিকভাবে আড়ালে রাখা।

    সাধারণত শীর্ষ বা ভয়ংকর সন্ত্রাসীদের জামিন হলে রাষ্ট্রপক্ষ চেম্বার জজ আদালতে গিয়ে জামিন স্থগিত চায়। কিন্তু এই চারটি মামলায় তেমন কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখা যায়নি, যা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

    হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়ার কিছুদিন পরই চট্টগ্রামের অপরাধ জগতে বড় ঘটনা ঘটে। গত ৫ নভেম্বর নির্বাচনী প্রচারের সময় বাজারে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় সাজ্জাদের প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী সরোয়ার বাবলাকে। এই হত্যাকাণ্ডের পর অভিযোগ ওঠে, কারাগারে বসেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নিজের অপরাধ সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করছিলেন সাজ্জাদ।

    এই অভিযোগ সামনে আসার পর প্রশাসনের তৎপরতা বাড়ে। ১৪ নভেম্বর সাজ্জাদকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে এবং ১৮ নভেম্বর তামান্নাকে ফেনী জেলা কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ঢাকার বসুন্ধরা সিটি এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর সাজ্জাদ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন।

    তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাবলাকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় তামান্না প্রকাশ্যে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দিয়েছিলেন। এর কিছুদিন পরই বাবলাকে গুলি করে হত্যা করা হয়, যা এই দম্পতির বিরুদ্ধে অভিযোগকে আরও জোরালো করে।

    চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার শাহ সৈয়দ শরীফ সময়ের কন্ঠস্বর-কে জানান, সাজ্জাদের বিরুদ্ধে বর্তমানে ১৬টি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে তিনটি মামলায় হাইকোর্টের জামিননামা এসেছে। তামান্নার চারটি মামলাতেই জামিননামা এসেছে। তবে সাজ্জাদ রাজশাহী এবং তামান্না ফেনী কারাগারে থাকায় সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সেখানে পাঠানো হয়েছে।

    সাজ্জাদের আইনজীবী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, চারটি মামলাতেই তার মক্কেল ও তার স্ত্রী জামিন পেয়েছেন এবং জামিননামা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে হাইকোর্ট থেকে জামিননামা দেরিতে চট্টগ্রামে পৌঁছানোর বিষয়ে তিনি কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।

    এসআর

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…