এইমাত্র
  • এবার মোটরসাইকেলের মালিকানা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন কবির
  • মাকে নিয়ে সু চির ছেলের মন্তব্যের পর যা জানালো জান্তা
  • বিজয় দিবসে বাংলাদেশকে শুভেচ্ছা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
  • বলিউডের গুপ্তচর সিনেমা ভারত-পাকিস্তানে রাজনৈতিক ঝড় : আল জাজিরা
  • যে কারণে এতো দামে মুস্তাফিজকে দলে টানল কেকেআর
  • ভোলায় চেয়ারে বসা নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের সংঘর্ষ, আহত ২০
  • ৯ কোটি ২০ লাখ রুপিতে কলকাতায় মোস্তাফিজ
  • টরন্টোতে প্রদর্শিত হলো মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা ‘সাবিত্রী’
  • মুসলিম নারীর নিকাব টেনে খুলে ফেলায় সমালোচনার মুখে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী
  • ‘নিরাপত্তা’র কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন বিএনপি প্রার্থী
  • আজ মঙ্গলবার, ২ পৌষ, ১৪৩২ | ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫
    লাইফস্টাইল

    বিয়ের পর মানুষ কেন বদলে যায়? মনোবিজ্ঞান যা বলে

    লাইফস্টাইল ডেস্ক প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:২৪ পিএম
    লাইফস্টাইল ডেস্ক প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:২৪ পিএম

    বিয়ের পর মানুষ কেন বদলে যায়? মনোবিজ্ঞান যা বলে

    লাইফস্টাইল ডেস্ক প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:২৪ পিএম

    বিয়ে এমন একটি সম্পর্ক, যেখানে প্রতিদিন একজন মানুষের সঙ্গে মানিয়ে চলতে হয়। বিয়ের আগে যে মানুষটি খুব হাসিখুশি ছিল, বিয়ের পর সে চুপচাপ হয়ে গেছে এমন অভিযোগ আমরা প্রায়ই শুনি। কেউ বলেন, দায়িত্ব মানুষকে বদলে দেয়। কেউ বলেন, ভালোবাসা ফুরিয়ে গেলে মানুষ বদলায়। আবার কেউ সরাসরি বলেন, “বিয়ের পর সবাই বদলে যায়।” কিন্তু প্রশ্ন হলো বিয়েই কি মানুষকে বদলে দেয়, নাকি বিয়ের পর জীবনের চাপ আমাদের আসল রূপটা সামনে নিয়ে আসে?

    ব্যক্তিত্ব কি সত্যিই বদলায়

    মনোবিজ্ঞান বলছে, মানুষের ব্যক্তিত্ব কোনও স্থির বিষয় নয়। শৈশব, জিন এবং পরিবেশ মিলেই আমাদের ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে। যদিও প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর ব্যক্তিত্ব মোটামুটি স্থায়ী হয়ে যায়, তবুও জীবনের বড় কোনও ঘটনা যেমন বিয়ে মানুষের আচরণ ও মানসিক গঠনে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আনতে পারে।

    বিয়ে এমন একটি সম্পর্ক, যেখানে প্রতিদিন একজন মানুষের সঙ্গে মানিয়ে চলতে হয়। নিজের ইচ্ছা, সময়, অভ্যাস সবকিছুর সঙ্গে আরেকজনের চাহিদা জড়িয়ে যায়। এই প্রতিদিনের সমঝোতা, দায়িত্ব আর প্রত্যাশাই মানুষের ব্যক্তিত্বে পরিবর্তনের সূচনা করে।

    মনোবিজ্ঞানের ‘বিগ ফাইভ’ তত্ত্ব

    বিয়ের পরে কোনও পরিবর্তন আসে কি না সে বিষয়টি বোঝার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব জর্জিয়ার মনোবিজ্ঞানী জাস্টিন ল্যাভনার ও তার সহকর্মীরা একটি গবেষণা পরিচালনা করেন। তারা ১৬৯টি দম্পতিকে বিয়ের ৬ মাস, ১২ মাস এবং ১৮ মাস পর প্রশ্নমালার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করেন। এতে দাম্পত্য সন্তুষ্টি ও ব্যক্তিত্ব দুই বিষয়ই পরিমাপ করা হয়।

    গবেষণাটি করা হয় মনোবিজ্ঞানের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ‘বিগ ফাইভ’ ব্যক্তিত্ব তত্ত্বের ভিত্তিতে। এই তত্ত্ব অনুযায়ী মানুষের ব্যক্তিত্ব পাঁচটি প্রধান বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে তৈরি নতুন অভিজ্ঞতার প্রতি আগ্রহ, দায়িত্ববোধ, সামাজিকতা, অন্যের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা এবং আবেগগত স্থিরতা।

    গবেষণায় দেখা যায়, বিয়ের পর অনেক নারীর ক্ষেত্রে নতুন অভিজ্ঞতার প্রতি আগ্রহ কিছুটা কমে আসে। মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, এটি সংসারজীবনের নিয়মিত রুটিনকে মেনে নেয়ার ফল। প্রতিদিনের কাজ, দায়িত্ব ও সময়সূচির ভেতর দিয়ে চলতে গিয়ে নতুন কিছু করার জায়গা কমে যায়।

    বিয়ের পর অনেক নারীর ক্ষেত্রে নতুন অভিজ্ঞতার প্রতি আগ্রহ কিছুটা কমে আসে। মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, এটি সংসারজীবনের নিয়মিত রুটিনকে মেনে নেয়ার ফল। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

    বিয়ের পর অনেক নারীর ক্ষেত্রে নতুন অভিজ্ঞতার প্রতি আগ্রহ কিছুটা কমে আসে। মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, এটি সংসারজীবনের নিয়মিত রুটিনকে মেনে নেয়ার ফল। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

    অন্যদিকে, পুরুষদের মধ্যে দায়িত্ববোধ স্পষ্টভাবে বাড়তে দেখা যায়। সময়মতো কাজ করা, সংসারের খরচ, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এই বিষয়গুলো পুরুষদের আগের চেয়ে বেশি সচেতন ও দায়িত্বশীল করে তোলে। অনেক পুরুষই বিয়ের পর বুঝতে পারেন, শুধু ভালোবাসা নয়, নির্ভরযোগ্য হওয়াটাও সম্পর্কের বড় অংশ।

    সামাজিকতার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, বিয়ের পর অনেক পুরুষ ধীরে ধীরে কম মিশুক হয়ে ওঠেন। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা বা বাইরে সময় কাটানোর বদলে পরিবারকেন্দ্রিক জীবন প্রাধান্য পায়। এটি একাকিত্ব নয়, বরং অগ্রাধিকার বদলে যাওয়ার ইঙ্গিত।

    মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মধ্যেই এই গুণ কিছুটা কমে যায়। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে এটি বেশি চোখে পড়ে। তবে মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি নেতিবাচক নয়। বরং অনেক নারী বিয়ের পর নিজের মতামত স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে শেখেন, যা আত্মসম্মানের দিক থেকে ইতিবাচক।

    পুরুষদের মধ্যে দায়িত্ববোধ স্পষ্টভাবে বাড়তে দেখা যায়। সময়মতো কাজ করা, সংসারের খরচ, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এই বিষয়গুলো পুরুষদের আগের চেয়ে বেশি সচেতন ও দায়িত্বশীল করে তোলে। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

    পুরুষদের মধ্যে দায়িত্ববোধ স্পষ্টভাবে বাড়তে দেখা যায়। সময়মতো কাজ করা, সংসারের খরচ, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এই বিষয়গুলো পুরুষদের আগের চেয়ে বেশি সচেতন ও দায়িত্বশীল করে তোলে। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

    সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায় আবেগগত স্থিরতার ক্ষেত্রে। গবেষণায় দেখা গেছে, নারীরা বিয়ের পর মানসিকভাবে আগের চেয়ে বেশি স্থির হয়ে ওঠেন। নিরাপত্তা ও স্থায়িত্বের অনুভূতি তাদের উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। পুরুষদের ক্ষেত্রেও সামান্য উন্নতি দেখা যায়।

    তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দাম্পত্য সন্তুষ্টি কিছুটা কমে আসে এটা গবেষণাতেও উঠে এসেছে। ১৮ মাসের মাথায় স্পষ্ট হয় যে ‘হানিমুন পর্ব’ শেষ। কিন্তু সবার ক্ষেত্রে এই পতন সমান নয়। যেসব স্বামী শুরু থেকেই নতুনত্বে আগ্রহী এবং যেসব স্ত্রী আবেগগতভাবে স্থিতিশীল, তাদের দাম্পত্য সন্তুষ্টি তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে।

    অনেকে মনে করেন, বয়স বাড়া, চাকরি, সন্তান জন্ম এসব কারণেই মানুষ বদলায়। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, বয়স, বিয়ে-পূর্ব সহবাস বা সন্তান হওয়া কোনোটিই এই পরিবর্তনের মূল কারণ নয়। বরং প্রতিদিন একজন মানুষের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কে থাকার ধারাবাহিক চাপই এই পরিবর্তনের পেছনে বড় ভূমিকা রাখে।

    সবশেষে বলা যায়, বিয়ে মানুষকে বদলায় কিন্তু এই বদলে যাওয়া মানেই খারাপ হয়ে যাওয়া নয়। এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই মানুষ শিখে নেয় কীভাবে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হয়। ভালোবাসা শুধু অনুভূতির বিষয় নয়, এটি এক ধরনের মানিয়ে নেওয়ার দক্ষতা। যে দম্পতিরা একে অপরের পরিবর্তনকে বুঝতে ও গ্রহণ করতে পারেন, তাঁদের সম্পর্কই শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে শান্ত ও স্থায়ী হয়।

    সূত্র : সাইকোলজি টুডে

    এবি

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…