দীর্ঘ ১৪ বছর পর ভারতের মাটিতে পা রেখেছিলেন আর্জেন্টাইন বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলার লিওনেল মেসি। গত ১৫ ডিসেম্বর ভারতের ৪টি বড় শহরে ঘোরার পর শেষ হয় তার ‘গোট ইন্ডিয়া ট্যুর’। মেসিকে ভারতে আনার কারিগর ছিলেন শতদ্রু দত্ত। সফরের প্রথম দিনেই বিশৃঙ্খলা হওয়ার কারণে মেসি থাকা অবস্থায়ই গ্রেপ্তার করা হয় শতদ্রুকে। তদন্তকারীদের তিনি জানিয়েছেন মেসির সফরের আদ্যপান্ত।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেসির ভারত সফরের জন্য মোট ব্যয় হয় প্রায় ১০০ কোটি রুপি। এর মধ্যে পারিশ্রমিক হিসেবে মেসিকে দেওয়া হয়েছে ৮৯ কোটি রুপি। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১২১ কোটি টাকার বেশি। এ ছাড়া ভারত সরকারকে কর হিসেবে দেওয়া হয়েছে ১১ কোটি রুপি।
তদন্তে জানা গেছে, এই ব্যয়ের একটি বড় অংশ এসেছে স্পনসর ও টিকিট বিক্রি থেকে। মোট খরচের প্রায় ৩০ শতাংশ জুগিয়েছেন স্পনসররা, আর টিকিট বিক্রি থেকে এসেছে আরও প্রায় ৩০ শতাংশ অর্থ।
এদিকে, তদন্তকারীরা শতদ্রুর জব্দকৃত (ফ্রোজেন) ব্যাংক হিসাবে ২০ কোটির বেশি রুপি খুঁজে পেয়েছেন। শুক্রবার তার বাসভবনে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কয়েকটি নথিও জব্দ করা হয়। যদিও শতদ্রুর দাবি, এই অর্থ এসেছে কলকাতা ও হায়দরাবাদে আয়োজিত মেসি–সংক্রান্ত অনুষ্ঠানের টিকিট বিক্রি এবং স্পনসরদের কাছ থেকে। তদন্তকারী সংস্থা তার বক্তব্য যাচাই করছে।
কলকাতার সল্টলেক স্টেডিয়ামে বিশৃঙ্খলার পর গত ১৩ ডিসেম্বরই গ্রেপ্তার করা হয় শতদ্রুকে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, সফরের সময় একটি বিষয় মেসিকে সবচেয়ে বেশি অস্বস্তিতে ফেলেছিল। অতিরিক্ত ভিড়ের মধ্যে বারবার তাকে স্পর্শ করা বা জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করায় তিনি বিরক্ত ছিলেন এবং সে কারণেই নির্ধারিত সময়ের আগেই অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন। বিশেষ তদন্তকারী দলের (এসআইটি) একটি সূত্র শনিবার এ তথ্য জানিয়েছে।
দীর্ঘ জেরার সময় শতদ্রু আরও জানান, মেসি ব্যক্তিগত স্পর্শ একেবারেই পছন্দ করতেন না। বিদেশি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা আগেই আয়োজকদের বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছিলেন বলেও তিনি দাবি করেন।
শতদ্রুর ভাষ্য অনুযায়ী, ভিড় নিয়ন্ত্রণে বারবার ঘোষণা দেওয়া হলেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়নি। নিরাপত্তা বলয়ের ভেতরে যেভাবে মেসির কাছে মানুষজন পৌঁছে যাচ্ছিলেন, তা তার কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না।
অনুষ্ঠানের সময় পশ্চিমবঙ্গের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে মেসির খুব কাছাকাছি অবস্থান করতে দেখা যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, ছবি তোলার সময় তিনি মেসির কোমরে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছেন।
এ নিয়ে অরূপ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তিনি নিজের প্রভাব ব্যবহার করে আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠদের মেসির কাছে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। সমালোচনার মুখে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ক্রীড়ামন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।
তদন্তকারীরা এখন খতিয়ে দেখছেন, কীভাবে বিপুলসংখ্যক মানুষ মাঠের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি পেয়েছিল। শতদ্রুর দাবি, শুরুতে মাত্র ১৫০টি গ্রাউন্ড পাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু একজন ‘অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি’ স্টেডিয়ামে পৌঁছানোর পর সেই সংখ্যা তিন গুণ হয়ে যায়। এরপর পরিস্থিতি আর তার নিয়ন্ত্রণে ছিল না। একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ওই প্রভাবশালী ব্যক্তির উপস্থিতির পর পুরো আয়োজনের নির্ধারিত ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ে।
আরডি