ঝোপঝাড়ে বা বড় গাছের ওপর সোনালি সুতোর মতো জড়িয়ে থাকা যে লতাটি আমরা দেখি, তার নাম স্বর্ণলতা। যার কোনো পাতা নেই, মূল নেই পরজীবী হয়েও এই লতাটি ভেষজ গুণে ভরপুর। আয়ুর্বেদ ও লোকজ চিকিৎসায় স্বর্ণলতা বা 'অলোকলতা' এক অতি পরিচিত নাম।
স্বর্ণলতা মূলত ক্লোরোফিলহীন একটি পরজীবী উদ্ভিদ। এটি যে গাছের ওপর জন্মায়, সেই গাছের পুষ্টি উপাদান শোষণ করেই বেড়ে ওঠে। তবে এই পরজীবী লতাটির মধ্যেই লুকিয়ে আছে নানা রোগের সমাধান।
নিচে স্বর্ণলতার আশ্চর্যজনক ভেষজ উপকারিতা তুলে ধরা হলো:
জন্ডিস ও লিভারের সমস্যায়: প্রাচীনকাল থেকেই জন্ডিস নিরাময়ে স্বর্ণলতা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর নির্যাস লিভারের কার্যকারিতা বাড়াতে এবং পিত্তরস নিঃসরণ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। লিভারের দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ কমাতেও এটি কার্যকর।
কৃমিনাশক হিসেবে: পেটের কৃমি দমনে স্বর্ণলতা একটি অব্যর্থ ওষুধ। লতাটি থেঁতলে নিয়ে তার রস হালকা গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেলে পেটের ক্ষতিকর কৃমি মরে যায়। এটি শিশুদের পেট ফাঁপা ও বদহজম কমাতেও সাহায্য করে।
চর্মরোগ ও ঘা নিরাময়ে: ত্বকের চুলকানি, দাদ বা অনেক দিনের পুরনো ঘা সারাতে স্বর্ণলতা বাটা প্রলেপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এতে থাকা প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ক্ষত স্থান দ্রুত শুকাতে এবং ইনফেকশন রোধ করতে সাহায্য করে।
চুলের যত্নে অপ্রতিদ্বন্দ্বী: চুল পড়া বন্ধ করতে এবং নতুন চুল গজাতে স্বর্ণলতার ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। স্বর্ণলতা সেদ্ধ পানি দিয়ে মাথা ধুলে খুশকি দূর হয় এবং চুলের গোড়া মজবুত হয়। এছাড়া অকালে চুল পেকে যাওয়া রোধেও এটি কাজ করে।
বাতের ব্যথা উপশমে: শরীরের গাঁটে বা জয়েন্টে ব্যথা হলে স্বর্ণলতা বাটা তিলের তেলের সাথে মিশিয়ে মালিশ করলে দ্রুত আরাম পাওয়া যায়। এটি শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে এবং পেশির টান কমাতে সহায়ক।
ব্যবহারে সতর্কতা: স্বর্ণলতা একটি পরজীবী উদ্ভিদ, তাই এটি কোন গাছের ওপর জন্মেছে তা লক্ষ্য করা জরুরি। বিষাক্ত কোনো গাছের (যেমন- ধুতুরা বা তামাক) ওপর জন্মানো স্বর্ণলতা কখনোই ভেষজ হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। ব্যবহারের আগে অভিজ্ঞ কবিরাজ বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
এইচএ